বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। যদিও ঘটনার চরিত্র গুলো আমার জন্মের আগের। তারপরও আমার পাশের বাড়িতে ঘটনা আমি দেখেছি পরবর্তীতে এবং জেনেছি। তাই আমি যখন লিখছি গল্প হিসেবে সবাই পড়বে। কিন্তু এটা একেবারেই সত্যি ঘটনা দেখে, শুনে, জেনে অনুভব করে আজ লিখতে বসলাম। বেশ কিছুদিন যাবৎ লিখবো লিখবো করেও আর লেখা হয়নি। আজ কেন জানি লিখতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে আমি না লিখলে এ সত্যিটা হয়তো অনেকেই জানবেনা। যা প্রতি মুহুর্তে আমাদের আশে পাশে ঘটছে। তাই নাম দিয়েছি গল্প হলেও সত্যি। কারণ আসলেই সত্যি।

আমাদের জায়গা কেনার সূত্রে লোকটির সাথে পরিচয়। তার নাম কামাল। দেখতে কালো লম্বা, স্বাস্থ্য ভালো, চেহারা ভালো, বি.এ. পাশ। বাড়ি বরিশাল, কাষ্টমস অফিসে চাকুরী করে। ভালো বেতন পায়। আমরা তাকে কামাল ভাই বলেই ডাকি। আমাদের পরিবারের সাথে উনার এবং উনার পরিবারের বেশ ভালো সম্পর্ক হলো। আমাদের জায়গা কিনে বছর খানেকের মধ্যেই সেখানে সে বাড়ি করলো। আমাদের দু’পরিবারের বেশ ভালো সম্পর্ক। উনি আমাদেরকে বলতো- আমাকে তোমরা বড় ভাই মনে করবা, আমরা তাই মনে করতাম। আমার আম্মাকে খালাম্মা বলে ডাকতো, বেশ সম্মান করতো। তার আচার, ব্যবহার খুব ভালোই ছিল। উনার স্ত্রীর নাম নাসরিন। উনার দুটি সন্তান- একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বেশ সুখের সংসার। ভালো সম্পর্ক হলে যা হয়। নাসরিন ভাবী গল্প করতে করতে একদিন বলল উনারা স্বামী স্ত্রী দু’জন দু’জনকে অনেক বেশী ভালোবাসে। সন্তানের চেয়ে উনি স্বামীকে বেশী ভালোবাসে। স্বামী ও সন্তানের চেয়েও উনাকেই বেশী ভালোবাসে। দু’জনের মধ্যে বোঝাপরাটা বেশ ভালো এবং বেশ কয়েক বছরে আমাদের পাশে থাকতে থাকতে আমরা তাই প্রমান পেলাম।

নাসরিন ভাবীকে বললাম- এতো ভালোবাসাতো খুব একটা দেখা বা শোনা যায় না। আপনারা এতো ভালো দু’জন দু’জনকে বাসেন, আসলেই অবাক হওয়ার মতো। তবে কারণ কি, কোন কারণ আছে নাকি? ভাবী হাসতে হাসতে বলল- আছে কারণ, আমরা দু’জন দু’জনকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। বলতে পারো ছোটবেলা থেকেই। আমি বললাম- তাই নাকি, কিভাবে? তখন উনি বলল- তোমাদের কামাল ভাই কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসেছে। তার কেউ নেই, বাড়ি বরিশাল। তখন আমাদের বাড়িতে এসে উঠলো। আমাদের বাড়ি নারায়নগঞ্জ। আমার বাবার বাড়ির অবস্থা আগেও খুব ভালো ছিল, এখনও খুব ভালো। আমি বিত্তবান পরিবারের মেয়ে। তোমার কামাল ভাইকে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমার বাবা তাকে আমাদের বাড়ীতে লজিং মাষ্টার হিসেবে রাখলো। তখন সে বি.এ পড়তো। তখন আমি সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। তখন থেকেই সে আমাদের কয়েক ভাই বোনকে পড়াতো। থাকতো, খেতো, পাশাপাশি সেও তার পড়াশুনা করতো। খরচ আমার আব্বাই তাকে দিতো। 

এভাবে আমার আব্বাই তাকে মানুষ করতে লাগলো। এক সময় বুঝলাম সে আমাকে খুব ভালোবাসে। বছর খানেকের মধেই আমিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তখন সে বলল আমাকে না পেলে সে মরে যাবে। বছর কয়েকের মধ্যে আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলাম। এদিকে আমাদের পরিবারেও জানাজানি হয়ে গেল। বাড়ির মুরব্বিরা যখন জিজ্ঞেস করল, তখন আমরা সত্যিটা বললাম এবং বললাম আমরা বিয়ে করতে চাই। এরই মধ্যে কামালেরও বি.এ.পাশ করা হয়ে গেছে, নাসরিনও বড় হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই ভাবলো কামালও শিক্ষিত হয়েছে। আমাদের খেয়ে পড়ে আমাদের বাড়িতেইতো মানুষ হয়েছে। আর দেখতে শুনতে খারাপ নয়। আমাদের মেয়েকে যেহেতু এতো ভালোবাসে আর মেয়েও যখন এতো ভালোবাসে, তখন আর আপত্তি কিসের? ওদের বিয়ে দিয়ে দেই। আমাদের অবস্থাতো ভালো, চাকুরী আমরাই দিয়ে দিবো, ছেলেটাকে প্রতিষ্ঠিত করে দেবো। তাতে আমাদের মেয়ে ভালো থাকবে। তারপর বাড়ি থেকে কামালের মাকে প্রস্তাব দিয়ে নিয়ম মাফিক ডেকে আনলো। কামালের বাবা নেই, ছোট বেলায় মারা গেছে। ওরা মায়ের কাছে অনেক কষ্টে অভাব অনটনে মানুষ হয়েছে। তাই ঢাকা আসা সোনার হরিনের পিছনে ছোটা। তারপর কামালের মা ও তার আত্মীয়-স্বজন ঢাকা এলো। সমস্ত খরচ দিয়ে নাসরিনের বাবা ওদের বিয়ে দিলো। তারপর ওরা ভালোই আছে। পরে কামালকে কাষ্টম অফিসে চাকুরী দিয়ে দিলো। কামাল ভালো বেতন পায়। 

বউকে নিয়ে ভালো থাকলো, দুটো বাচ্চাও হলো। বিয়ের বছর দশেক পর কাষ্টমস এর মোটা টাকায় কামাল ভাইও বেশ সচ্ছল হয়ে উঠলো এতোটাই যে ঢাকায় জায়গা কিনে বাড়ি করার মতোই। তারপরতো আমাদের কাছ থেকে দু কাঠা জায়গা কিনলো, বাড়ি করলো, সুখে শান্তিতে থাকতে ছিল। ঘটনাও জানলাম ভাবীর কাছে। বেশ ভালো সম্পর্ক ওদের এবং ওদের সাথে আমাদেরও প্রায় বছর পাঁচেক পার হলো। ছেলে মেয়ে গুলো তখন বেশ বড় হয়ে উঠলো উনাদের। কামাল ভাই এরই মধ্যে আরো বিত্তবান হয়ে উঠলো। বাড়ি আরও উন্নত করলো, জয়দেবপুর অনেকখানি জায়গা কিনলো। সেখানে বাড়িও করলো। এরই মধ্যে টাকার গরমে কামাল ভাই নিজের বাড়ি ভাড়া দিয়ে ধানমন্ডি ভাড়া বাসায় চলে গেল। সে অনেক ধনী, তাই প্রমান করতেই হয়তো সেখানে কয়েক বছর থাকলো। এদিকে ছেলে মেয়ে দুটোও একেবারে বড় হয়ে গেছে। কামাল ভাইয়ের বয়স হয়ে এলো প্রায় পঞ্চাশ আর ভাবীর বয়স চল্লিশ থেকে আনুমানিক পয়তাল্লিশ। হঠাৎ আবার উনারা ধানমন্ডির বাড়ি থেকে টংগীর নিজেদের টংগীর এই বাড়িতেই ফিরে এলো। তখন ভাবীকে জিজ্ঞেস করলাম- ভাবী আপনি এখানে এলেন কেন? ভাবী বলল- আর নিজের বাড়ি রেখে ভাড়া থাকতে কি ভালো লাগে, তাই চলে এলাম। তখন উনার ছেলেটা আই.এ পড়ে, মেয়েটা নাইনে পড়ে। আবার চলতে লাগলো ভালোই। হঠাৎ কেন জানি মনে হলো কামাল ভাইয়ের আচরণ অনেক পরিবর্তন, সংসারেও কেমন যেন অমনোযোগি। কাজের কথা বলে মাসে দু’একদিন প্রায় বাইরে থাকে। অনেকদিন দেখতে দেখতে আমার আম্মা হঠাৎ নাসরিন ভাবীকে বলেই ফেললো- নাসরিন সাবধান! কামালের অনেক পরিবর্তন, কেমন জানি লাগছে! আবার এই বয়সে কোন কিছু করলো নাকি? খেয়াল রেখো। তখন ভাবী বলল- না খালাম্মা কাজের ব্যস্ততা আর কিছুনা। আমরা দু’জন দু’জনকে কতো ভালোবাসি এখনও জানেন না। আম্মা বলল- জানি বলেইতো বললাম।

এদিকে বছর খানেকের মধ্যে কামাল ভাইয়ের অনিয়ম অনেক বেশী হয়ে যাচ্ছে। নাসরিন ভাবী এবার বেশ চিন্তিত কানা ঘোষায় শুনলো তার স্বামী কারো সাথে সম্পর্কিত। সে বিশ্বাস করতে পারলো না। প্রমান করার জন্য ছুটে বেড়াতে লাগলো। তখন নাসরিন ভাবী তাদের জয়দেবপুরের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানলো এখানে এক মহিলা আছে, যার তিনটে সন্তান, তার স্বামী নেই। তার সাথে কামাল ভাইয়ের বেশ খাতির। এটা জেনে আসার পর থেকে নাসরিন ভাবীর আর শান্তি নেই। স্বামীকে জিজ্ঞেস করলো সরল মনে। স্বামী সবটাই অস্বীকার করলো। তারপর স্বামী কাজের কথা বলে প্রায়ই চিটাগাং যায়, তখন উনার সন্দেহ হলো। উনি অফিসে খোঁজ নিলো স্বামী চিটাগাং যাবে কবে। জেনে আসলো। যেদিন স্বামী চিটাগাং রওয়ানা হলো নাসরিন ভাবীও তাকে না জানিয়ে তাকে অনুসরণ করে রওয়ানা হলো। দু’জন একেবারেই চিটাগাং পৌঁছালো। কামাল ভাই ভাবীকে দেখলোনা জানতেও পারলোনা। ভাবী কামাল ভাইকে অনুসরণ করে একেবারেই তার গন্তব্য স্থান পর্যন্ত পৌঁছালো। 

কামাল ভাই একটা বাড়িতে ঢুকলো। নাসরিন ভাবী সে বাড়িতে ঢুকলো না ঢুকে অন্য বাড়ীতে এবং তাদের কাছে কামাল ভাই সম্পর্কে জানতে চাইলো। উনারা বলল- এটাইতো কামাল সাহেবের বাড়ি। উনার স্ত্রী আর তিনটি সন্তান। উনি কাষ্টমস এ চাকুরী করে, বেশ পয়সাওয়ালা চাকুরীর কারণে মাঝে মধ্যে ঢাকায় থাকতে হয়। প্রতিবেশী হিসেবে কামাল সাহেব এবং তার পরিবারতো বেশ ভালো। উনারা তিন বছর যাবৎ এখানে ভালো ভাবেই আছে। এই সত্য গুলো শোনার পর নাসরিন ভাবীর মাথার আকাশ ভেঙ্গে পরলো। উনি শোনার পরও বিশ্বাস করতে পারছেনা।

অর্থাৎ জয়দেবপুরের ঘটনা নাসরিন ভাবী টের পেয়েছে বিধায় কামাল ভাই ঐ মহিলাকে বিয়ে করে চিটাগাং এসে লুকিয়ে সংসার করছে। আর দু’দিকেই কাজের অজুহাত দেখাচ্ছে। তারপর নাসরিন ভাবীকে উনারা জিজ্ঞাসা করলো আপনি কে? আপনি কোথা থেকে এসেছেন আর উনার সম্পর্কে এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন? তখন নাসরিন ভাবী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো আর বলল- উনি আমার স্বামী। আমি উনার প্রথম স্ত্রী, আমাদের বড় দুটি সন্তান আছে। আজ উনার যতো টাকা অবস্থা সব আমার বাবার দেওয়া। একথা শুনে সবাই অবাক হলো, এলাকায় কানা ঘোসা শুরু হলো। সমস্ত মহল্লার মানুষ জড়ো হলো। এক পর্যায়ে সবাই চলে গেল। 

যথারিতী রাত হলো, কামাল ভাই লজ্জায় নিরব। এখন দুই বউ ঝগড়া শুরু করলো। নাসরিন ভাবী বলল- আমরা প্রায় ছোট বেলা থেকেই দু’জন দু’জনকে ভালোবাসি। সে আমাদের বাড়িতে খেয়ে, পড়ে মানুষ হয়েছে। আমার বাবা তাকে চাকুরী দিয়েছে। সব দিয়েছে তার চাকুরীর প্রমোশনও বাড়িয়ে দিয়েছে। তার আজকে যা আছে সব আমার জন্যই হয়েছে। সে আমাকে বেশী ভালোবাসে। দ্বিতীয় স্ত্রী বলল- এখনতো সে আমাকে বিয়ে করেছে, আমাকে বেশী ভালোবাসে। দু’জন বেশ অনেক্ষণ এসব নিয়ে ঝগড়া করলো। স্বামীকে ভাগাভাগির চেষ্টা করলো। কেউ আর ঘুমালো না। সারারাত ঝগড়ায় শেষ হলো। কামাল ভাই মাথাই তুলতে পারছে না। অবেশেষে নাসরিন ভাবী সকাল বেলা একবুক কষ্ট নিয়ে নিরবে একাই ফিরে এলো। এসে আমাদের সবাইকে এসব ঘটনা খুলে বলল আর খুব কাঁদলো। উনার বাড়ির পরিবেশ খুব ভারী হয়ে গেলো। ছেলে মেয়ে দুটোও বেশ কাঁদছে। 

আমরা সবাই নীরব হয়ে গেলাম। ঘন্টা খানেক পর নাসরিন ভাবী তার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। প্রথমে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি, পরে অনুমান করলাম এবং দরজা না খোলাতে সবাই সন্দেহ করলাম। জানালা কাঁচের গ্লাসের ছিল বিধায় জানালা ভেঙ্গে ফেললাম। তখন দেখা গেলো নাসরিন ভাবী শাড়ী ফ্যানের সাথে পেঁচিয়ে আত্মহত্যায় প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। সবাই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো। এক পর্যায় খুব দ্রুত সবাই মিলে দরজা ভেঙ্গে ফেললো। ততক্ষণে নাসরিন ভাবী ঝুলে পড়লো। “রাখে আল্লাহ, মারে কে?” হায়াত ছিলো উনি বেঁচে গেল। উনি তখন হাউমাউ করে কাঁদছে। আম্মা বলল- নাসরিন তুমি একি করছো? বোকামী করোনা। দুটি সন্তানের কথা ভেবে শক্ত হও, বেঁচে থাকো। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে। সবাই তাকে বুঝালো, তার ভাড়াটিয়া, আত্মীয়-স্বজন এবং তার সন্তানেরা তাকে পাহারা দিয়েই রাখতো। কামাল দুই সংসার আর কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকলো। সব ঘটনা জানার পর নাসরিন ভাবী আর কামাল ভাইয়ের সম্পর্কের অনেক দূরত্ব তৈরী হলো এবং সাথে সন্তানদেরও। এ ঘটনার মাত্র বছর খানেকের মধ্যে নাসরিন ভাবী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে লাগলো। অকারণে বেশী কথা বলতো। একে ওকে গালাগালি দিতো। এ বাড়িতে ঐ বাড়িতে ঢুকে যাকেই দেখতো তাকেই ঢিলা দিতো। সবাই বিরক্ত হতে লাগলো। 

এক পর্যায়ে নাসরিন ভাবী একেবারেই পাগল হয়ে গেলো। এতো কষ্ট প্রতরণা উনি হয়তো সহ্য করতে পারেনি। উনি পরনের কাপড় চোপর খুলে ফেলতো, চিৎকার চেঁচামেচি করতো, ঘর থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে যেতো যখন তখন। উনার এসব পাগলামীর কারণে আশে-পাশের সবাই খুব অতিষ্ট হয়ে উঠলো। সামাজিক ভাবে শালিস হলো। শালিসে সিদ্ধান্ত হলো উনারা আর এখানে থাকতে পারবে না এবং তাই হলো। উনারা এখান থেকে চলে গেল। বাড়িটা ভাড়া দিয়ে রেখে চলে গেলো। তারপর হঠাৎ শুনলাম উনাদের বাড়িটা পাশের বাড়ির বাড়িওয়ালার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে, উনারা আর কখনোই ফিরবে না। খুবই কষ্ট হলো শুনে। 
তারপর হঠাৎ একদিন আমার সাথে কামাল ভাইয়ের দেখা হলো রাস্তায়। উনি আমাকে দেখে লজ্জায় এড়িয়ে গেল আর আমার কেন জানি উনার সাথে কথা বলতেই মন চাইলোনা। তবে উনাকে কেমন যেন অন্যরকম দেখলাম, কথা না বলেই চলে এলাম। বাসায় এসে আম্মাকে জিজ্ঞাসা করলাম- কামাল ভাইকে দেখলাম আগের মতো তো নাই, কেমন জানি খুব শুকিয়ে গেছে। 

বয়সের চেয়েও বুড়া দেখা যাচ্ছে আর কেমন জানি লাগলো! আম্মা বলল- কথা বলেছিস? আমি বললাম- না আম্মা। আম্মা বললো- শেষ কামড়টা ওকে আল্লাহই দিয়েছে, তাই ওর এই অবস্থা। আমি বললাম- কেন আম্মা কি হয়েছে? আম্মা বলল- ওর হাই প্রেসার, হার্ডের সমস্যা, ডায়াবেটিস এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দু’বেলা ইনসুলিন নেওয়ার পরও নিয়ন্ত্রণ হচ্ছেনা, তাই ওর এই অবস্থা। আমি বললাম- আম্মা আসলেই উনাকে এমন করুণ অবস্থায় দেখে ভালো লাগেনি। আম্মা বলল- দেখ আরো কতকি হয়। মাঝে মধ্যেই জিজ্ঞেস করি- আম্মা কি অবস্থা উনাদের? আম্মা বলে- আর কি ঐ রকম-ই। আর আমরা জানবোই বা কি করে, ওরাতো বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছে আর আমরাও এখন আর ঐ বাড়িতে থাকিনা। আমরা এখন উত্তরার বাড়িতেই থাকি। তাই এই মুহুর্তের শেষ আর জানিনা।

তবে মনে হলে খুব খারাপ লাগে। বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়- “টাকাইতো জীবনে সব নয়, কখনো কখনো টাকা জীবনকে ধ্বংস করে, সুন্দর সম্পর্ককে নষ্ট করে”। একটি কথাই মনে হচ্ছে- “টাকাই অনর্থের মূল”। মানুষ কিভাবে সব ভালোবাসা ভুলে যায়, নিজের অতীত ভুলে যায়, কি করে এতো বদলায়? ঘটনাটি লিখতে যেয়ে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারলামনা। আমি এলোমেলো হয়ে গেলাম। জানিনা পুরো ঘটনাটি লিখতে পারলাম কি না। পুরোটাতো সম্ভব নয় একটা ধারণা দিলাম মাত্র। কোন নারীর সাথে যেন এমন না হয়, কোন ভালবাসাই যেন এভাবে নষ্ট না হয়। ওরা ভালো থাকুক, সবাই ভালো থাকুক, সবার ভালোবাসা ভালো থাকুক। আমি এটাই প্রার্থনা করি। এমন ঘটনা যেন কারো জীবনেই না ঘটে।
Next
This is the most recent post.
Previous
Older Post

Post a Comment

 
Top